একটি গণহত্যা ও চীনের পাহাড় চূড়ায় রহস্যময় ঝুলন্ত কফিন

মানুষ মারা গেলে যদি স্রষ্টার কাছে যায়, তবে এই মানুষগুলো নিশ্চয়ই স্রষ্টার কাছাকাছি জায়গাতেই অবস্থান করছে। দক্ষিণ চীনের পাহাড়ের চূড়া থেকে ঝুলিয়ে রাখা সারি সারি কফিনগুলো বছরের পর বছর ধরে মানুষকে বিস্মিত ও আতঙ্কগ্রস্ত করে চলেছে। উঁচু পাহাড়ের কিনারা থেকে ঝুলিয়ে দেয়া এই কফিনগুলো চীনের সিচুয়ান প্রদেশের গংজিয়ানে অবস্থিত। ৪০০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া বো উপজাতীয় গোত্রের মানুষদের সমাধি বলে ধারণা করা হয় এই ঝুলন্ত কফিনগুলোকে। প্রতিটি কফিন বানানো হয়েছে একটি করে ফাঁপা গাছের গুঁড়ি ব্যবহার করে। একটি ব্রোঞ্জের আবরণ কফিনগুলোকে সুরক্ষা দিত। একজন স্থানীয় বিশেষজ্ঞ বলেন, “কফিনগুলোর মাঝে সবচেয়ে পুরনোটি প্রায় ৩০০০ বছর আগের। আর পরবর্তী সময়ের কফিনগুলোও প্রায় ১৫০০ বছরের পুরনো। এখন পর্যন্ত জানা যায় নি, কেন এই কফিনগুলোকে এত উপরে এভাবে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল।“ সে সময়ে বো উপজাতীয়দের ধারণা ছিল, এভাবে মৃতদেহদের ঝোলানো হলে দেবতারা সহজেই তাদের কাছে আসতে পারবেন। আবার অনেকের ধারণা ছিল, সমাধিগুলোকে এভাবে ঝুলিয়ে রাখলে এগুলো প্রাণীর আক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবে ও তাদের পরকাল শান্তিময় হবে।

২০১৩ এর জুলাই মাসের দিকে একদল গবেষক এগুলো নিয়ে কাজ শুরু করেন। কফিনগুলো খুলে পড়ে যাচ্ছিলো মাটিতে। গত ১০ বছরে ২০টি কফিন খুলে পড়ে গিয়েছে। স্থানীয় রীতি অনুসারে এগুলোকে আবারো যথাস্থানে স্থাপনের চেষ্টা চলছে। সবচেয়ে নিচে ঝুলানো কফিনটি মাটি থেকে ১০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। আর সবচেয়ে উপরে ঝুলানো কফিনটি ১৩০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। বো উপজাতীয় ছিল একটি ক্ষুদ্র নৃতাত্বিক জনগোষ্ঠী যারা চীনের সিচুয়ান ও ইউনান প্রদেশের মধ্যবর্তী সীমান্ত অঞ্চলে বসবাস করতো। আজ থেকে প্রায় ৩০০০ বছর আগে তারা বেশ সমৃদ্ধ একটি সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিল। কিন্তু কেন এই সমাধিগুলো এত উঁচুতে ঝোলানো হয়েছিল? প্রাচীন কিছু লোকগল্প বলছে, বো জনগোষ্ঠীর মানুষরা উড়তে পারতো! কিন্তু এখনো মূল ঘটনা এখনো রহস্যঘেরা। এখনো বিশেষজ্ঞরা কোন স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারেন নি। সবচেয়ে নতুন কফিনটি বানানো হয়েছিল ৪০০ বছর আগে। তখন ছিল মিং রাজবংশের রাজত্বকালের মাঝামাঝি সময়। মিং রাজবংশ বো উপজাতীয়দের উপর ভয়াবহ গণহত্যা চালায়। এর ফলে তাদের সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে কমে যায়।

একদিন দেখা গেল, বো উপজাতীয় গোত্রের সামান্য যে কয়জন অবশিষ্ট ছিল তাদের কাউকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। তখন থেকে এখন পর্যন্ত তাদের উধাও হয়ে যাওয়ার বিষয়টি বিরাট এক রহস্য। কারণ গণহত্যার ঘটনা যখন ঘটেছিল, কিছু কফিন সে সময়ের পরেই বানানো হয়েছিল। তাহলে কারা সে কফিন বানিয়েছিল? এত অল্প মানুষ এত ভারি ভারি কফিনগুলো কিভাবে পাহাড়ের কিনারা থেকে ঝুলিয়ে দিয়েছিল? শেষ প্রশ্ন, বো’রা কি সত্যিই উড়তে পারতো? কিংবা তাদের কি এরকম কোন ক্ষমতা ছিল, যা হয়ে উঠেছিল মিং রাজবংশের জন্য হুমকির কারণ? উত্তর এখনো অজানা!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *