ভয়ংকর অভিশপ্ত এক ছবি- পোট্রেট অব দ্য ক্রাইং বয়!

১৯৮৮ সালে ইংল্যান্ডের হ্যাসোয়েলে এমোস (Amos) পরিবারের বাড়িটি এক রহস্যময় অগ্নিকান্ডে ধ্বংস হয়ে যায়। ফায়ার ব্রিগেডের কর্মীরা যখন আগুনে পুড়ে যাওয়া ধ্বংস স্তূপ সরাতে শুরু করলেন, তখন তারা একটি ফ্রেমে বাঁধানো পোট্রেটের সন্ধান পান। এটি ছিল খুব সুন্দর এক ছোট ছেলের ছবি, যার চোখ থেকে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছিল আর চেহারাটি ছিল বিষণ্ণ। পুরো বাড়ির সবকিছু আগুনের লেলিহান শিখাতে ধ্বংস হয়ে গেলেও এই পোট্রেট বা ছবিটি স্মপূর্ণ অক্ষত অবস্থায় ছিল। এরপরের ঘটনা ঘটে ব্র্যাডফোর্ডে। সেখানে এক অগ্নিকান্ডের পর ধ্বংসস্তূপ থেকে আবারো এক ক্রন্দনরত ছেলের ছবি পাওয়া যায়। ইয়র্কশায়ার ফায়ার ব্রিগেডের প্রধান জাতীয় সংবাদপত্রগুলোকে এক বিবৃতিতে বলেন, পর পর বেশ কয়েকটি অগ্নিকান্ডের ঘটনায় ঘটনাস্থল থেকে এই একই ধরণের ছবি অক্ষত অবস্থায় পেয়েছেন দমকলকর্মীরা। যখন সাংবাদিকরা জিজ্ঞেস করলেন এই ছবি কি অশুভ কিনা, তিনি কোন মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান। ১৯৯৮ সালে ডাবলিনে এক বাড়িতে অগ্নিকান্ড হয়, সেখানেও এই একই ছবি পাওয়া যায়। সমস্যা হলো, এই অভিশপ্ত ছবির ছেলেটির পরিচয় কিংবা ছবিটি কে এঁকেছিলেন, সেই ব্যপারে কিছুই জানা যাচ্ছিলো না। ডাবলিনের ঘটনার ৩ বছর আগে ১৯৯৫ সালে ডেভন শহরের একজন স্কুলশিক্ষক যিনি একইসাথে প্রখ্যাত ও সম্মানিত একজন গবেষক, জর্জ ম্যালোরি দাবি করেন তিনি অবশেষে ছবিটি সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তিনি জানান, একজন বৃদ্ধ স্প্যানিশ পোস্ট কার্ড শিল্পী ফ্র্যাঙ্কট সেভিল এই ছবিটি এঁকেছিলেন। এ শিল্পী থাকতেন মাদ্রিদে। ১৯৬৯ সালে শিল্পীটি মাদ্রিদের রাস্তায় ছবির ছোট ছেলেটিকে ঘুরে বেড়াতে দেখতে পান। ছেলেটি কখনোই কথা বলতো না, তার চোখে থাকতো রাজ্যের বিষণ্ণতা। সেভিল এই ছেলেটির ছবি আঁকেন। এক পাদ্রী ছেলেটিকে চিনতে পারেন। তিনি বলেন, এই ছেলেটির নাম ডন বনিলো, যে কিনা নিজের চোখে তার বাবা-মা’কে পুড়ে ছাই হয়ে যেতে দেখে। পাদ্রীটি আরো বলেন, ছেলেটিকে এক জায়গায় বেশিদিন যেন থাকতে না দেয়া হয়। কারণ যেখানেই সে কিছুদিন অবস্থান করে সেখানে রহস্যময়ভাবে আগুন লেগে যায়। যা কারণে গ্রামবাসীরা ছেলেটিকে Diablo কিংবা পিশাচ নামে সম্বোধন করতো।

সেভিল এসব কুসংস্কারে বিশ্বাস করতেন না। ছেলেটিকে তিনি নিজের কাছে রেখে দিলেন। ছেলেটিকে নিয়ে আঁকা The Crying Boy শিরোনামের পোট্রেট তাঁকে খ্যাতি ও অর্থ উভয়ই এনে দেয়। কিন্তু রহস্যময় এক অগ্নিকান্ডে তাঁর পুরো স্টুডিও ধ্বংস হয়ে যায়। সেভিল নিঃস্ব হয়ে যান। তিনি ডন বনিলো নামে ছোট অনাথ ছেলেটিকে আগুন লাগানোর জন্য দায়ী করেন। ছেলেটি কাঁদতে কাঁদতে পালিয়ে যায়। এরপর তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় নি। কিন্তু এরপরে পুরো ইউরোপ জুড়ে অগ্নিকান্ড আর তার সাথে অশুভ এই ছবি উদ্ধারের একের পর এক রিপোর্ট প্রকাশিত হতে থাকে। কিন্তু একই ধরণের ছবি কেন পাওয়া যাবে?উত্তর নেই।

শেষ পর্যন্ত সেভিলকেও অশুভ মানুষ বলে গণ্য করা হতে থাকে, কেউ তাকে ছবি আঁকার দ্বায়িত্ব তো দিতই না, তার আঁকা ছবিগুলোর দিকে তাকাতোও না। ১৯৭৬ সালে বার্সেলোনাতে একটি গাড়ি সজোরে ধাক্কা খায় একটি দেয়ালের সাথে। গাড়িটি বিস্ফোরিত হয়, ভেতরের চালকের দেহ এতোটাই পুড়ে গিয়েছিল যে তার চেহারা শনাক্ত করা যাচ্ছিলো না। পরে জ্বলন্ত গাড়ি থেকে চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স কিছুটা অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়। গাড়িটি ১৯ বছর বয়সী ডন বনিলো নামে এক ছেলে চালাচ্ছিলো। এটা কি সেই ছেলেটিই? সেটি জানার কোন উপায় হয়তো নেই। কারণ ছেলেটির মৃতদেহ নিতে কেউ আসে নি। এবং বলাই বাহুল্য যে এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি কোন সঠিক ব্যাখ্যাও।

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *