১৯৭১ সালের আগস্টের ২৩ তারিখ। বেলমেজ ডি লা মরালেডা,জেইন, আন্দালুসিয়া, স্পেন। গৃহকর্ত্রী মারিয়া গোমেজ ক্যামারা দেখলেন তার বাড়ির রান্নাঘরের কংক্রিটের মেঝেতে মানুষের মুখের মত একটি আকৃতি হঠাৎ করেই ভেসে উঠলো। মারিয়ার স্বামী হুয়ান পেরেইরা ও তাদের ছেলে মিগুয়েল কুড়াল দিয়ে মেঝে থেকে সেই মুখের ছাপ তুলে ফেলেন ও মেঝেতে নতুন কনক্রিট ঢেলে দিলেন। কিন্তু কিছুই হলো না। মেঝেতে আরো নতুন মুখ ভেসে উঠতে শুরু করলো। লক্ষ্য করে দেখা গেলো যে মেঝে,ঘরের দেয়ালে এরকম রহস্যময় মুখের ছাপ ভেসে উঠতো। আবার সেগুলো নিজ থেকেই অদৃশ্য হয়ে যেত! শহরের মেয়রকে ঘটনাটি জানানো হলে তিনি নতুন করে মেঝে কাটতে নিষেধ করলেন। মেঝের কিছু অংশ কেটে নেয়া হলো গবেষণার জন্য।
এটা নিয়ে গবেষণা করেছেন হ্যানস বেন্ডার ও গারম্যান ডি আর্গুমোসা। কোন এক অদ্ভুত কারণে বেন্ডার তার গবেষণা ফলাফল নিয়ে খুব বেশি কিছু লিখেন নি। আর্গুমোসা টানা দুই বছর ধরে এটি নিয়ে গবেষণা করেন ও গথিক যুগের কোন রহস্যের কথা বলেন। কিন্তু এই দুইজনের কেউই আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু বলেন নি। হোসে মার্টিনেজ রোমেরো তার লেখা বই Las Caras de Bélmezএ বলেন, পুরো ঘটনাটি আসলে মিথ্যা। আর্গুমোসা এর বিরোধীতা করে বলেন, “হোসে পুরো ঘটনাটিকে উড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা করছেন, যেটি আসলে উচিত নয়।“ ১৯৯০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে Instituto de Cerámica y Vidrio or ICV (Institute of Ceramics and Glass) এর ফাদার জে এম পিলন ও তার দল সেই বাড়িটির মেঝের কিছু নমুনা নিয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষানিরীক্ষা করার সময় আরো দুটি মুখের ছবি দেখতে পান। ৩০ গ্রাম ও ৬০ গ্রাম ওজনের দুটি নমুনার উপর বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক পরীক্ষা চালানো হয়। দেখা গেল, মেঝের উপাদানে কোন রঙের ব্যবহার হয় নি। এছাড়া দুটি নমুনাতে পাওয়া গিয়েছে জিঙ্ক, বেরিয়াম, কপার, ক্রোমিয়াম, ফসফরাস, সীসা।

এরপর বেশ কয়েকজন প্যারাসাইকোলজিস্ট এই বাড়িটি নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা চালান। এঁদের মাঝে একজন Spanish Society of Parapsychologyর হোসে লুই জর্ডান এই ব্যপারটি নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা করেন। তিনি মনে করেন, এখানে আসলে খ্যাতি ও অর্থলাভের জন্য কোন এক ধরণের জালিয়াতি হতে পারে। তার ধারণা, এই বাড়ির দেয়াল ও মেঝেতে কনক্রিটের উপর দাগ মুছতে ব্যবহার করা রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করা হয়েছে, যেটি একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অদৃশ্য হয়ে থাকতে পারে ও কিছুক্ষণ পর দৃশ্যমান হয়। যাই হোক, এরকম রহস্যময় ঘটনার কারণে মারিয়ার বাড়িতে মানুষের আনাগোনা বেড়ে যায়। দেয়াল বা মেঝের ছবি দেখতে চাইলে মারিয়াকে অর্থ প্রদান করতে হত। কিছু বিশেষজ্ঞ দাবি করেন, এই ছবিগুলো সিলভার ক্লোরাইড বা নাইট্রেটের রঙ দিয়ে আঁকা হয়েছে। কিন্তু যখন Spanish National Research Council গবেষণা করলেন, তখন তারা এধরণের কিছু পায় নি। মারিয়া ২০০৪ সালে মারা যান। জনপ্রিয় গবেষক পেদ্রো আমোরস আরো মুখচ্ছবি সেই বাড়ির দেয়ালে ভেসে উঠার কথা জানান।

যদিও মিডিয়াতে তা ভুল প্রমাণিত হয়। ২০০৭ সালের মে মাসে সাংবাদিক হাভিয়ের ক্যাভানালিস ও ফ্রান্সিসকো মানেজ তাদের বই Los Caras de Bélmezএ দাবি করেন পুরো বিষয়টি আসলে মারিয়ার অর্থ উপার্জনের জন্য এক ধরণের প্রতারণা ও তাদের দাবি, এই রহস্যময় ছবিগুলো আসলে মারিয়ার ছেলে ডিয়েগো পেরেইরার আঁকা। মারিয়ার রান্নাঘরের মাটির নিচে কিছু মানুষের দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল। অনেকের দাবি, পুরো বাড়িটি আসলে ১৩শ শতাব্দীর একটি মুসলিম কবরস্থানের উপর দাঁড়িয়ে আছে, যেখানে পরে খ্রিস্টানদেরও সমাহিত করা হয়। ২০১১ এর ১৪ আগস্ট। গবেষকরা মারিয়ার যে বাড়িতে জন্ম হয়েছিল সেটি নিয়ে গবেষণা করছিলেন বেশ আগে থেকেই। সেই বাড়িটি কিছুদিন ধরে বন্ধ ছিল। তারা ফিরে এসে দেখলেন দেয়ালে আবারো কিছু মুখচ্ছবি ভেসে উঠেছে! তদন্ত এখনো চলছে…