২০০৮ এর ১২ সেপ্টেম্বর। বিকেল ৪ টা ২৩ মিনিট। ঘটনাস্থল চেটসওয়ার্থ। ২২৫ জন যাত্রী নিয়ে একটি মেট্রো-লিঙ্ক কমিউটার ট্রেনের সাথে ইউনিয়ন প্যাসিফিক ফ্রেইট ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়। ভয়াবহ সে দুর্ঘটনায় ২৪ জন্য যাত্রী মারা যান ও ১৫০ জন মারাত্মকভাবে আহত হন। নিহত হওয়া হতভাগ্য যাত্রীদের মাঝে একজন ছিলেন চার্লস প্যাক। ময়নাতদন্তের মাধ্যমে জানা যায় তিনি দুর্ঘটনার সাথে সাথেই মারা যান। কিন্তু তার মৃত্যুর চার ঘণ্টা পর তার পরিবারের সদস্যরা চার্লসের মুঠোফোন নম্বর থেকে ৩৫ টি কল পান।
রাত ৯ টা ৮ মিনিট। চার্লসের বাগদত্তা আন্দ্রিয়া কাটজের কাছে চার্লস এর নম্বর থেকে কল আসে। আন্দ্রিয়া সাথে সাথে কলটি রিসিভ করেন। কিন্তু ওপাশ থেকে কোন শব্দ শোনা যাচ্ছিল না, আবার কেউ কলটি কেটেও দিচ্ছিল না! আন্দ্রিয়া ও চার্লসের পরিবারের অন্যান্যরা বারে বারে সেই নম্বরে সংযোগ পাবার চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু অপারেটর থেকে যান্ত্রিক কণ্ঠে ভয়েস মেইল পাঠাতে বলা হয়। যখন উদ্ধারকর্মীরা ট্রেন দুটির ধ্বংস্তূপ থেকে উদ্ধারকাজের সমাপ্তি ঘোষণা করতে যাচ্ছিলেন ঠিক সেই সময়ে চার্লস এর মুঠোফোন নম্বর থেকে আরো একটি কল আসলো। এবার উদ্ধারকর্মীরা কলটি অনুসরণ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। তারা দেখলেন, কলটি প্রথম ট্রেন থেকে এসেছে। চার্লসকে জীবিত অবস্থায় পাওয়ার আশায় উদ্ধারকর্মীরা সেখানে ছুটে গেলেন। বিকেল ৩ টা ২৮ মিনিটে চার্লসের ফোন থেকে সর্বশেষ কল আসে, তার মৃতদেহ পাওয়ার এক ঘণ্টা আগে। কিন্তু এর পরের কল গুলো কে করেছিল? পরের ঘটনা। মার্ক প্রেবস্ট নামে এক ভদ্রলোক ৯৩ বছর বয়সে মারা যান। এই দীর্ঘ জীবনে তিনি তার পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বেশ সুন্দর একটি জীবন কাটিয়ে গিয়েছেন। জীবনের শেষ পর্যায়ে তার প্রোস্টেট ক্যান্সার ধরা পড়ে। ধীরে ধীরে ক্যান্সারের যন্ত্রণা তার সারা শরীরে ছড়িয়ে পরে। তার বড় মেয়ে ও নাতি-নাতনিরা তাকে পর্যাপ্ত সেবা করেন। অক্টোবরের এক শীতল দিনে মার্ক মারা যান। তার বড় মেয়ে এই ভেবে স্বান্তনা পেলেন যে, অবশেষে তার বাবা রোগের যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেলেন। কিন্তু মেয়েটি মৃত্যুর পরের জীবনে বিশ্বাস করতেন না ও তার ধারণাতেও ছিল না তার জন্য কি ভয়াবহ ঘটনা অপেক্ষা করছে।
মার্কের শেষকৃত্যানুষ্ঠানের পর মার্ক এর অল্প কিছু বন্ধু ও মার্কের মেয়ে তার বাবার স্মৃতির উদ্দেশ্যে এক নৈশভোজের আয়োজন করেন। এমন সময় তার বাসার নম্বরে বেশ কয়েকটি কল আসলো। মেয়েটি caller ID পরীক্ষা করে দেখল, এটি তার মৃত বাবার নম্বর! আর সেটি আসছিল তার বাবার বাড়ির ভেতর থেকে। কিন্তু সে ঘরের চাবি তো মেয়েটির কাছে, তবে কল করছে কে? যাই হোক, কল রেকর্ডার চালু করার পর শেষ দুটি কল রেকর্ড করা হলো। মেয়েটি শুনতে পেল তার বাবা মার্কের বেশ ক্ষীণ কণ্ঠ, “মার্গি, আমি ভাল আছি আর তোমার মা আমার সাথেই আছেন!” মার্গির মা ও মার্কের স্ত্রী অনেক বছর আগেই মারা গিয়েছিলেন। তবে সব ঘটনার পরিণতি খুব ভাল হয় নি। লিসা নামে একজন কিশোরী মেয়ে লিউকমিয়াতে আক্রান্ত হওয়ার পর তার দেহ পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়েছিল। কেমোথেরাপির যন্ত্রণার কারণে সে আরো অসুস্থ হয়ে পড়েছিল ও নিশ্চিত মৃত্যুর দিন গুনছিল। লিসার মা বেশ কয়েক বছর আগে এক ভয়াবহ গাড়ি দুর্ঘটনায় মারা যান। লিসা প্রায়ই তার মায়ের জন্য কাঁদতো। লিসার বাবা তার সাধ্যমত চেষ্টা করতেন মেয়েকে শান্ত রাখার। লিসা মারা যাওয়ার আগের রাতে লিসা ও তার বাবা হাসপাতালে বসে ছিলেন। একজন নার্স লিসার দেখাশোনা করছিলেন। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো।
নার্স ফোন কল রিসিভ করলেন কিন্তু কেউ উত্তর দিল না। দ্বিতীয়বার ফোন বেজে উঠলো। এবার লিসার বাবা কল রিসিভ করলেন। অন্য পাশ থেকে কোন এক মহিলা খুব অস্পষ্ট স্বরে কিছু একটা বলার চেষ্টা করছিলেন কিন্তু খুব ভালভাবে বোঝা যাচ্ছিল না। লিসার বাবা caller ID পরীক্ষা করে দেখলেন ও হতভম্ব হয়ে গেলেন। যে নম্বর থেকে কল এসেছে সেটি তার বাড়িতে ৫ বছর আগে ব্যবহৃত হত। কিন্তু তার স্ত্রী মারা যাবার পর সেই সংযোগ তিনি বিচ্ছিন্ন করে দেন। তিনি বার বার সে নম্বরে ফোন দিচ্ছিলেন কিন্তু অপারেটর থেকে বলা হল যে সেই নম্বরের সংযোগ বন্ধ আছে। কল করার জন্য তিনি লিসার রুমের বাইরে এসেছিলেন। নার্স তাকে জরুরি ভিত্তিতে ডেকে পাঠালেন। সেই রহস্যময় কল আসার কিছুক্ষণের মাঝেই লিসা মারা যায়। লিসার বাবার দৃঢ বিশ্বাস সেই কলটি তার মৃত স্ত্রীরই ছিল। এরকম আরো অনেক ঘটনার কথা অনেকে জানিয়েছেন, যেখানে তারা দাবি করেছেন তারা তাদের মৃত স্বজনদের কাছ থেকে ফোন কল পেয়েছেন। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কণ্ঠস্বর খুব ক্ষীণ শোনায়, কিংবা টেলিফোন লাইনের সমস্যার কারণে হঠাৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আর যাদেরকে কল করা হয়, প্রায়ই তাদের ডাক নাম বা পারিবারিক নামেই সম্বোধন করে তাদের মৃত স্বজনরা। আর এখন পর্যন্ত এই ‘কল ফ্রম দ্য ডেড’র ব্যখ্যা খুঁজে পাওয়া যায় নি।