টাইম ট্রাভেলের কয়েকটি অদ্ভুত কিন্তু ‘সত্য’ ঘটনা!

টাইম ট্রাভেল বা সময় পরিভ্রমণ কি আসলেই সম্ভব? পদার্থবিজ্ঞান কী বলে? যদি সম্ভব হয় তবে কীভাবে? আর যদি সম্ভব না হয় তবে কেন নয়? আপাতত তর্কটিকে এক পাশে রেখে জেনে নেয়া যাক কিছু অদ্ভুত ঘটনা, যেগুলোর কোন যুক্তিযুক্ত ব্যাখ্যা পাওয়া যায় নি আজো। কিছু ঘটনা ভবিষ্যতের সামনে এগিয়ে আসার, কিছু ঘটনা অতীতে চলে যাওয়ার, আবার কোথাও হয়তো স্থির হয়ে আছে বহমান সময়- এমনই এক ঝাঁক “সত্য” কাহিনী নিয়ে এই আয়োজন।

১)ভবিষ্যতে চলে যাওয়ার সত্যিকারের ঘটনা?

১৯৩৫ সালের ঘটনা। ব্রিটিশ রয়েল এয়ার ফোর্সের এয়ার মার্শাল স্যার ভিক্টর গডডার্ড যখন তার হকার হার্ট বাইপ্লেন নিয়ে আকাশে উড়লেন, তখন বেশ অদ্ভুত অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হলেন। সেই সময়ে গডডার্ড ছিলেন একজন উইং কমান্ডার। তিনি যখন স্কটল্যান্ডের এডিনবার্গ থেকে ইংল্যান্ডের এন্ডোভারে নিজের এয়ার বেজে ফিরে আসছিলেন। তিনি এডিনবার্গ থেকে কিছুটা দূরে ড্রেম নামে একটি পরিত্যক্ত এয়ার ফিল্ডের উপর দিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিলেন। এককালে এখানে বিমান উঠানামা করতো, কিন্তু সেখানে তখন চড়ে বেড়াতো গরু। ভিক্টর তার বিমান নিয়ে এগিয়ে চলছিলেন, কিন্তু হঠাৎই এক অদ্ভুত ঝড়ের মুখোমুখি হলেন। বাদামি-হলুদ রঙের মেঘের মাঝে হারিয়ে যেতে লাগলো তার বিমান, তিনি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন। তীব্র গতিতে বাঁক খেতে খেতে তার বিমানটি দ্রুত মাটির দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো। কোনোমতে ভিক্টর বিমানটিকে নিয়ন্ত্রণ করলেন, ঝড় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, তিনি দেখলেন তার বিমান ফেলে আসা সেই পরিত্যক্ত ড্রেম এয়ার ফিল্ডের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এ কী! পরিত্যক্ত এয়ার ফিল্ড আর পরিত্যক্ত তো নেই! সেখানে হ্যাঙ্গার বা বিমান রাখার স্থানে ৪ টা বিমান রাখা ছিল। তিনটি বিমানই ছিল বাইপ্লেন যা ভিক্টরের অত্যন্ত পরিচিত। কিন্তু অদ্ভুত বিষয় হচ্ছে, এদের গায়ে ছিল পুরনো আমলের ভিন্ন ধরণের রঙ। চতুর্থ বিমানটি ছিল একটি মনোপ্লেন, কিন্তু ১৯৩৫ সালে ব্রিটিশ রয়েল এয়ার ফোর্সের কোন মনোপ্লেন ছিল না! শুধু তাই নয়, বিমানগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের কাজে নিয়োজিত কর্মীরা ল্যান্ডের পর তাকে বা তার বিমানকে দেখলোই না, নিজেদের মত কাজ করে যাচ্ছিলো! ভিক্টর যখন আবার ড্রেম এয়ার ফিল্ড ত্যাগ করলেন, তখন আবার ঝড় শুরু হলো। কিন্তু তিনি নিরাপদে এন্ডোভারে ফিরে আসেন। এরপর ১৯৩৯ সালে রয়েল এয়ার ফোর্সের বিমানগুলো হলুদ রঙে রঙ করা হয়, কর্মীদের পোশাকের রঙ হয়ে যায় নীল। ভিক্টর কি কিছু সময়ের জন্য ১৯৩৫ সাল থেকে ১৯৩৯ সালে চলে গিয়েছিলেন?

(২)অতীত আর বর্তমান সময়ের ঘূর্ণিতে আটকে যাওয়া

লেখক স্কট কোরালেসকে এ ঘটনা সম্পর্কে বলেন চিকিৎসক ডা. রাউল রায়োস সেন্তেনো। ঘটনাটি রাউলের একজন রোগীর। ৩০ বছর বয়সী সে তরুণীর দেহের এক পাশ পুরোপুরিভাবে অচল বা প্যারালাইজ হয়ে গিয়েছিল। তিনি পেরুর রাজধানী লিমা থেকে ৩৫ মাইল দূরে মারকাহুয়াসি নামে স্টোন ফরেস্টে গিয়েছিলেন বন্ধুদের সাথে। রাতের বেলা তিনি ও তার কয়েকজন বন্ধু অভিযানে বের হলেন। কিছুদূর গিয়েই তারা একটি কুটির দেখতে পেলেন। সেখানে মিটিমিটি আলো জ্বলছিল, ভেসে আসছিল গানের শব্দ। তরুণীটি দেখলেন কুটিরের ভেতর গানের তালে কয়েকজন নাচছে, তিনি কিছুটা অগ্রসর হতেই একটা খোলা দরজার সাথে ধাক্কা খেলেন। তিনি দেখলেন, ভেতরের সবার দেহেই ১৭শ শতকের পোশাক। যখনই তিনি সে কক্ষে প্রবেশ করতে যাচ্ছিলেন, তার এক বন্ধু তাকে পেছন থেকে টান দিল। আর সাথে সাথে তার দেহের এক অংশ অবশ হয়ে গেল। কেন এরকম হলো? সেই কুটির আর তরুণীটি কি ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা বা সময়ে অবস্থান করছিলেন? এরকম কি হতে পারে তার বন্ধু তাকে পেছন থেকে টান দেয়ায় তিনি দুই ভিন্ন সময়ের মাঝে আটকে গিয়েছিলেন? ইইজি পরীক্ষায় দেখা যায়, তরুণীটির মস্তিষ্কের বাম দিক ঠিকভাবে কাজ করছিল না, আর সেখানে অস্বাভাবিক রকমের বৈদ্যুতিক সংকেতের আদান-প্রদান হচ্ছিলো!

(৩) হামলার ১১ বছর আগে বিমান আক্রমণের পূর্বাভাস

১৯৩২ সালে জার্মান সাংবাদিক জে বার্নার্ড হাটন ও তার সহকর্মী ফটোগ্রাফার জোয়েকিম ব্রান্ডট হামবুর্গ-এল্টোনা শিপইয়ার্ডে একটি প্রতিবেদন তৈরির কাজে যান। কাজ শেষে যখন তারা যখন ফিরে আসছিলেন তখনোই তারা দূর থেকে বিমান উড়ে আসার আওয়াজ শুনতে পেলেন। তারা ভাবলেন এটা হয়তো নিয়মিত মহড়ার অংশ। কিন্তু তাদের ধারণা আতঙ্কে পরিণত হলো, যখন বিমানগুলো থেকে বোমা বর্ষণ শুরু হলো। গর্জে উঠলো শিপইয়ার্ডে থাকা বিমান বিধ্বংসী কামান। দুই সাংবাদিক দ্রুত তাদের গাড়িতে উঠলেন, আকাশ ধোঁয়াতে কালো হয়ে গিয়েছিল ও জোরে বেজে উঠেছিল সতর্কতামূলক সাইরেন। যখন তারা শিপইয়ার্ড ত্যাগ করলেন হঠাৎ করে আবিষ্কার করলেন আকাশ পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে, চারপাশে বিমান হামলার কোন চিহ্ন নেই, সব স্বাভাবিক, শান্ত। এমনকি সেই মূহুর্তে ব্রান্ডট যে ছবিগুলো তুলেছিলেন, সেখানেও কোনো অস্বাভাবিক কিছু পাওয়া গেল না। সবকিছু শান্ত, চমৎকার। ছবিতেও বিমান হামলার কোনো নিশানাই নেই। কিন্তু এর প্রায় ১০ বছর পর ১৯৪৩ সালে ২য় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে ব্রিটিশ বিমান বাহিনীর হামলায় পুরো শিপইয়ার্ড ঠিক সেভাবেই বিধ্বস্ত হয় যেমনটা ১১ বছর আগে হাঁটন ও ব্রান্ডট দেখেছিলেন!

(৪)যে হোটেলে সময় আটকে আছে!

১৯৭৯ সালে ইংল্যান্ডের এক দম্পতি ফ্রান্সে গেলেন ছুটি কাটাতে। ঘুরে বেড়ানোর এক পর্যায়ে তারা রাতে থাকার জন্য একটা হোটেল খুঁজছিলেন। যাওয়ার পথে তারা খুব অবাক হলেন, কারণ রাস্তার আশেপাশের বিভিন্ন জিনিস তাদের কাছে বেশ অদ্ভুত লাগছিল। খুঁজতে খুঁজতে তারা একটি পুরনো আমলের হোটেলের সামনে উপস্থিত হলেন। ভেতরে ঢুকে দেখলেন প্রায় সব কিছুই ভারি কাঠের তৈরি। আধুনিকতার কোন চিহ্নই সেখানে নেই, এমনকি কোনো টেলিফোন পর্যন্ত নয়! তাদেরকে যে কক্ষে থাকতে দেয়া হলো সেখানের দরজায় কোন তালা লাগানোর কোন ব্যবস্থা ছিল না, কাঠের ছিটকিনি ছিল। জানালার পাল্লাগুলো ছিল কাঠের ও কোনো কাচ ছিল না। পরদিন সকালে যখন তারা নাশতা করছিলেন, তখন দুজন ফরাসি পুলিশ হোটেলে ঢুকলেন খেতে। তারা পুলিশ সদস্য দুইজনের পোশাক দেখলেন, অনেক পুরনো আমলের! শুধু তাই নয়, এক রাতে সব মিলিয়ে তাদের বিল আসলো মাত্র ১৯ ফ্রাঁ! যাই হোক বিল চুকিয়ে তারা ফ্রান্স থেকে স্পেনে চলে গেলেন। ফিরে আসার সময় চিন্তা করলেন সেই অদ্ভুত হোটেলে আবার ঘুরে আসা যেতে পারে। কিন্তু সেখানে গিয়ে দেখলেন হোটেলটির কোন অস্তিত্বই নেই, পুরো জায়গাটি খালি! সেখানে এর আগে যে ছবিগুলো তোলা হয়েছিল সবগুলো জ্বলে গিয়েছিল। আরো কিছু অনুসন্ধানের পর জানা গেল ওরকম পোশাক ফ্রান্সের পুলিশ পরতো ১৯০৫ সালে!

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *